ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিগত ১৬টি বছর দেশকে রীতিমতো চুষে খেয়েছে। হাসিনা আর তার দল ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের ক্ষমতার দাপটে জনসাধারণ হারিয়েছিলো তার বাক স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই হতে হতো সীমাহীন নির্যাতনের শিকার। এমনকি করা হতো হত্যা, গুমও। বেলা শেষে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালানোর আগেও ছাত্র-জনতার ওপর বর্বরতা দেখিয়ে হত্যা করে দেড় হাজার নিরীহ প্রাণ। পতিত স্বৈরাচার ক্ষমতার লোভী হাসিনা ভারতে পালানোর পর থেকেই চারিদিকে একটাই দাবী উঠতে থাকে তার দল আওয়মী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২৪ এর গণ আন্দোলনে হাসিনা আর কাউয়া কাদের খ্যাত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনায় সরাসরি অস্ত্রহাতে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ আগেই নিষিদ্ধ হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করি করি করেও যেনো করা হচ্ছিলো না। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে শুরু হয় কড়া আন্দোলন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে গড়িয়ে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে শাহবাগে। জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবী উঠতে থাকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। এরপরই গতরাতে ঘোষণা আসে আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যক্রম বিচার না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার। তবে এবারই প্রথম নয় এর আগেও আওয়ামী লীগ দুই দুইবার নিষিদ্ধ হয়েছিলো।
এদিকে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে। সেই সব দলের কিছু কিছু আবার নিবন্ধনও ফিরে পেয়েছে। আবার কিছু দল রয়ে গেছে নিষেধাজ্ঞার কবলেই। দেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগই প্রথম দল যাদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগের তিনটি অংশ, পিডিপিসহ স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি পিবিএসপি ও পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি পিবিসিপি নিষিদ্ধ করা হয়। দুটি বামপন্থি মাওবাদী সংগঠন এখনও নিষিদ্ধ। আবার ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন চালু করেন শেখ মুজিব। তখনি গঠন করেন বাকশাল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর বাকশালের কার্যক্রমসহ সব রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করা হয় সামরিক আইনে। এরপর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মো. সায়েম ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আবারও রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পায় দলগুলো।
অন্যদিকে ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় জামায়াতসহ নিষিদ্ধ সব দল রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পায়। আর ২০০৫ সালে দেশজুড়ে বোমা হামলার পর জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবি কে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৯ সালে হিযবুত তাহ্রীর নিষিদ্ধ হয়। এরপর ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত ও ছাত্রশিবিরিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধও করে। এরপর ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা লেজ গুটিয়ে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকার গত আগস্টে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আবারো রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ পায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী।
সবশেষ গত বছরের ২৩ অক্টোবর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়।