যাকাত দিতে হবে সংঘবদ্ধভাবে

whatsapp sharing button

হযরত উসমান (রা) এর খেলাফতকালে আরবে যাকাত গ্রহণ করার কোনো মানুষ ছিল না। কারণ সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচ্ছল করে তোলাটাই যাকাতের মূল লক্ষ্য – ইসলামের এ বিধান বাস্তবায়নে তারা সচেতন ছিলেন। আর এটা সম্ভব তখনই যখন ব্যক্তিগত যাকাতের অর্থ একসঙ্গে জমা করে পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা হবে।

যাকাত অর্থব্যয়ের শরীয়ত নির্ধারিত ৮ খাত;

“যাকাত তো শুধু (এক) দরিদ্র, (দুই) অক্ষম, (তিন) যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী, (চার) যাদের মন জয় করা প্রয়োজন, (পাঁচ) মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে, (ছয়) ঋণজর্জরিত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে, (সাত) আল্লাহর পথে (জনকল্যাণমূলক কাজ, ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) এবং (আট) মুসাফিরদের জন্যে ব্যয় করা যাবে। (যাকাতের অর্থ ব্যয়ে) এটাই আল্লাহর বিধান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা তওবা : ৬০]

যাকাতের অর্থ ব্যয়ে শরীয়ত নির্ধারিত ৮টি খাতের একটি হচ্ছে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা। কিন্তু আপনি এক প্রশ্নোত্তরে বলেছেন, “মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। কারণ এটি শরীয়ত নির্ধারিত ৮টি খাতের মধ্যে পড়ে না।” আমার প্রশ্ন হচ্ছে বিষয়টি সাংঘর্ষিক কিনা?

মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। এটা ফকিহদের একটি বড় অংশের অভিমত। কারণ মসজিদে ধনী গরীব নির্বিশেষে সবাই যায়। সবাই নামাজ পড়ে। অন্যদিকে যাকাত গরীবের হক। যাকাতের অর্থ এমনভাবে ব্যয় করতে হবে যেন সেখান থেকে দরিদ্ররাই উপকৃত হতে পারে।

আর মসজিদ নির্মাণের জন্যে যাকাতের অর্থ কেন ব্যবহার করতে হবে? মসজিদ তো একজন মুসলমানের অন্তরের প্রশান্তির জায়গা। এটার জন্যে তো প্রয়োজনে তার সবকিছুই দিয়ে দেয়া উচিত।

একইভাবে মাদ্রাসা নির্মাণেও যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। কারণ সেখানে ধনী গরীব সবাই পড়ালেখা করতে পারে। তবে মাদ্রাসায় যদি কোনো গরীব ছাত্র থাকে, তার পড়াশোনার জন্যে এই অর্থ দেয়া যাবে। কিন্তু মাদ্রাসা বিল্ডিং তৈরি করার জন্যে দেয়া যাবে না।

আবার অনাথ এতিমদের জন্যে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। সে অর্থ এতিমদের থাকার বাসস্থান নির্মাণে যেমন ব্যয় হতে পারে, তেমনি এতিমখানায় তাদের পড়াশোনা ভরণপোষণের ব্যয় নির্বাহের জন্যেও হতে পারে।

ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের যে খাত সেটাকে বলা হয় ‘ফি সাবিলিল্লাহ’। ইসলামি চিন্তাবিদদের সম্মিলিত মত হচ্ছে দ্বীন ইসলামের প্রচারে জন্যে পুস্তিকা, বই, পুস্তক প্রকাশে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। যেমন, একজন যদি মনে করেন যাকাতের অর্থ দিয়ে তিনি আল কোরআনের বাংলা মর্মবাণী বিতরণ করবেন তিনি তা করতে পারেন। বেছে বেছে গরীবদের কাছে অর্থাৎ যার এটা কেনার সামর্থ্য নাই, তাদের কাছে বিতরণ করতে পারেন।

অতএব যাকাতের অর্থ ব্যয়ে শরীয়ত নির্ধারিত ৮টি খাতের বাইরে কিছু করার সুযোগ কারো নেই। এ ব্যাপারে ফকীহরা যে মত ব্যক্ত করেছেন, সেটাই আমরা অনুসরণ করছি।

এক হিসাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১০ লক্ষ কোটি টাকা। এর আড়াই শতাংশ হারে যাকাতের পরিমাণ হয় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২৫ হাজার কোটির জায়গায় যদি ১২ হাজার কোটি টাকাও বছরে যাকাত আদায় হয়, তাহলে তা দিয়ে প্রতিটি ১০০ কোটি টাকা করে ১২০টি সমন্বিত ফলজ, বনজ, মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রকল্প হাতে নেয়া যাবে।

প্রতিবছর ১২০টি করে ১০ বছরে ১২০০টি এবং বছর বছর এই থেকে প্রবৃদ্ধি আমাদের দেশ থেকে দারিদ্রকে করবে পুরোপুরি নির্বাসিত। দেশের সকল যাকাতগ্রহীতা রূপান্তরিত হবে যাকাতদাতায়।

সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায় করলে আগামী ১৫ বছরের ভেতরেই সম্ভব এই লক্ষ্য অর্জন করা।