পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আপ্যায়ন মোদির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। মুনিরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারার পর যেভাবে ট্রাম্প নিজেকে ‘সম্মানিত বোধ’ করেছেন বলে জানিয়েছেন, সেটাকে মোদি সরকারের চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এনিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে ট্রাম্পকে সবসময় মোদির ‘বন্ধু’ পরিচয় দেওয়া গেরুয়া শিবির।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছে নয়াদিল্লি। সেই অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল বিরোধী দলগুলি। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ট্রাম্প-মুনির সাক্ষাৎ নিয়ে তোপ দাগেন মোদি সরকারকে। তিনি বলেন, এই ঘটনা (ট্রাম্প-মুনির সাক্ষাৎ) ভারতের জন্য বিরাট কূটনৈতিক ব্যর্থতা।
কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ফিল্ড মার্শাল অসিম মুনির পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান নন। তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান। তথাপি ট্রাম্প তাকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান এবং প্রচুর প্রশংসাও করেন। এক্স হ্যান্ডেলে রমেশ লিখেছেন, এই সেই ব্যক্তি যার উসকানিমূলক মন্তব্যের পরে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। প্রচ্ছন্ন মদত দিয়েছিল পাক সেনা। এর পরেই মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, এই ঘটনা ভারতের বিরাট কূটনৈতিক ব্যর্থতা।
এদিকে, বিরল এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস’ নিয়ে ভারতের নিরন্তর প্রচার তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। গ্রহণযোগ্যও নয়। পাকিস্তান ব্রাত্য তো নয়ই।
এই বৈঠকটি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি ঘিরে মোদি সরকার তীব্র তোপের মুখে পড়েছে।
ফিল্ড মার্শাল মুনিরের সাথে ট্রাম্পের এই বৈঠকের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো মোদি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে। তাদের অভিযোগ, এই বৈঠক ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থের পরিপন্থী এবং মোদি সরকারের দুর্বল কূটনীতির ফল। বিশেষ করে, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে উত্তেজনা চরমে, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এই ধরনের বৈঠক ভারতের জন্য এক ধরনের কূটনৈতিক আঘাত।
ভারতের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণেই পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে। এই বৈঠক ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার পথ খুলে দিতে পারে, যা ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক গভীর হলে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একজন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হোয়াইট হাউসে এমন উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক নজিরবিহীন। এই বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে পাকিস্তানের গুরুত্বের ইঙ্গিত বহন করে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়ে আসছিল। পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক আঞ্চলিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন তারা।
ভারতীয় গণমাধ্যমের বিশ্লেষণে বলা হয়, ট্রাম্প ও মোদির ‘বন্ধুত্বে’র বিষয়টি নিয়ে প্রচার করে থাকে গেরুয়া শিবির। উভয় রাষ্ট্রনেতার সুসম্পর্কের কথা একশ্রেণির মিডিয়াও বলে থাকে। যদিও বাণিজ্য চুক্তি, শুল্ক চাপানো, সর্বোপরি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের কর্মকাণ্ডে তার প্রভাব দেখা যায়নি!ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরের ‘সফল’ কূটনৈতিক চাল নিয়েও কথা হয়। যদিও সেই সফলতা বাস্তবের মাটিতে ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে বলেই অভিযোগ বিরোধীদের।
বিশ্লেষকদের একাংশেরও দাবি, ক্রমশ পড়শি দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক এবং তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সাউথ ব্লক। মুনির-ট্রাম্প মধ্যাহ্নভোজ এবং বৈঠক এই সমালোচনা আরও জোরদার করল।