চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শীতল যুদ্ধ আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। চীন-বিরোধী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ এবং দমনের প্রতিজ্ঞাও জানিয়েছে বেইজিং। দেশটি বলেছে, অবনতিশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে তারা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে।
সোমবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত একটি শ্বেতপত্রে বেইজিং আরও বলেছে, ‘পশ্চিমা চীন-বিরোধী শক্তিগুলো চীনকে নিয়ন্ত্রণ, দমন ও দুর্বল করার জন্য সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা করছে। তারা পশ্চিমাকরণ ও বিভক্তিকরণ ঘটানোর কৌশল অনুসরণ করছে এবং চীনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।’
চীনের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্ভাবনী ধারণা, কার্যক্রম এবং অর্জনগুলোর একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিষয়ে বোঝাপড়া আরও গভীর করতে ‘নতুন যুগে চীনের জাতীয় নিরাপত্তা’ শীর্ষক শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করে চীনের স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিস।
একই দিনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে প্রাথমিক শুল্ক পর্যালোচনা শেষ করেছে। সপ্তাহান্তে উভয় পক্ষ পরস্পরের পণ্যের ওপর প্রাথমিকভাবে ৯০ দিনের জন্য শুল্ক কমাতে সম্মত হয়।
যদিও চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনা সাময়িকভাবে প্রশমিত হয়েছে, তারপরও বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতি বহু বিষয়ে উচ্চ মাত্রার প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন অভ্যন্তরীণ স্থিতিস্থাপকতা জোরদারের জন্য প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা এবং প্রতিরক্ষা খাতে আধুনিকীকরণের ওপর জোর দিয়ে আসছে।
এদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে ফিলিপাইনের সঙ্গে বিরোধ এবং তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বেইজিং চাপে রয়েছে। বেইজিং তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এটি পুনরুদ্ধারের কথা বলে থাকে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও, ওয়াশিংটন চীনের বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করে এবং দ্বীপটিকে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চীনের নিকটবর্তী দ্বীপমালা বরাবর যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মার্কিন মিত্রদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বেইজিংয়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল এখন বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে। শীতল যুদ্ধের উত্তরাধিকারসূত্রে থাকা সমস্যাগুলো পুনরায় উত্তপ্ত হতে পারে এবং বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপে আঞ্চলিক ও সামুদ্রিক বিরোধগুলো আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’
শ্বেতপত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, চীনকে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা অবিবেচনাপ্রসূত এবং ব্যর্থ হবে। বেইজিং তার চারটি ‘লাল রেখা’ স্পষ্ট করেছে—তাইওয়ান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যু, চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং উন্নয়নের অধিকার—যা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
চীন বলেছে, ‘নতুন শীতল যুদ্ধ লড়া যাবে না এবং এতে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। চীনকে আটকে রাখার প্রচেষ্টা নির্বুদ্ধিতা ও অকার্যকর।’
শ্বেতপত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, বহিরাগত শক্তি এবং কিছু নির্দিষ্ট দেশ চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে এবং সীমান্ত ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর, পূর্ব চীন সাগর, শিনজিয়াং, তিব্বত ও হংকংয়ের মতো ইস্যুগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে প্রায়শই চীন-বিরোধী তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
চীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা, ন্যাটোর এশিয়া-প্যাসিফিক সংস্করণ তৈরির উদ্যোগ, পারমাণবিক শক্তি লেনদেন, প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কিছু দেশের দ্বারা মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের বিরোধিতা করেছে।
পত্রিকায় চীন আরও বলেছে, তথাকথিত পশ্চিমা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের নামে বিদেশি শক্তি চীনের ভেতরে বর্ণ বিপ্লব ও পথ-রাজনীতির মতো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। এসব কার্যক্রম প্রতিহত ও দমন করতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বেইজিং।