আগামী ২৫ বছর ধরে গরম মৌসুমে আর হজ পড়বে না। সৌদি আরবের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ নতুন হজ পঞ্জিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, হজের সময়কাল এখন ধীরে ধীরে ঠান্ডা মৌসুমে প্রবেশ করছে। ফলে হাজীরা আগামী প্রজন্মের জন্য অপেক্ষাকৃত স্বস্তিকর আবহাওয়ায় হজ আদায় করতে পারবেন। এই পরিবর্তন হাজীদের জন্য যেমন স্বস্তির, তেমনি হজ ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্যও অনেক সুবিধাজনক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিটিওরলজির মুখপাত্র হুসেইন আল কাহতানি জানিয়েছেন, চলতি বছরই শেষবারের মতো গ্রীষ্মকালে হজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর থেকে হজ ধীরে ধীরে বসন্ত, শীত ও শরতের দিকে সরে যাবে। এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো চন্দ্রপঞ্জির সময় গণনা পদ্ধতি। হিজরি বর্ষ চাঁদের উপর নির্ভর করে, আর তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে প্রতি বছর প্রায় ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। এই হিসেবেই হজের সময় ধীরে ধীরে বদলে যায়। ফলে এই পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ২৫ বছর গরমকালে আর হজ পড়বে না।
গালফ নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হজের এই সময়কালকে তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে:
২০২৬ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত হজ পড়বে বসন্তকালে, অর্থাৎ মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে।
২০৩৪ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত হজ হবে শীতকালে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এবং ডিসেম্বরের শেষ ভাগে।
এরপর ২০৪২ থেকে ২০৪৯ সাল পর্যন্ত হজ পালন করা হবে শরৎকালে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে।
২০৫০ সাল থেকে হজ আবার গ্রীষ্মকালে ফিরে আসবে।
এই মৌসুমভিত্তিক সময়সারণী মূলত হিজরি ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পার্থক্যের কারণে তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রতিবছরই হজ ১১ দিন করে এগিয়ে আসে। এতে হাজীরা ভবিষ্যতে বিভিন্ন ঋতুতে হজ পালনের সুযোগ পাবেন।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে হজ পালন অনেক হাজীর জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যারা বয়স্ক বা যাদের শারীরিক সমস্যা আছে। নতুন সময়সারণী অনুযায়ী ঠান্ডা বা তুলনামূলকভাবে সহনীয় আবহাওয়ায় হজ আদায় অনেক বেশি স্বস্তিকর হবে। একইসঙ্গে, হজ ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর জন্যও এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন, কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় রসদ সরবরাহ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ সহজতর হবে।
সউদী আরবের নতুন হজ পঞ্জিকা ভবিষ্যতের হাজীদের জন্য একটি সুসংবাদ বয়ে এনেছে। গরমে কষ্ট না পেয়ে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইবাদত পালন একটি বড় স্বস্তির বিষয়। একইসঙ্গে এটি একটি স্মার্ট পরিকল্পনা, যা হজের ব্যবস্থাপনাকে আরও সুষ্ঠু ও নিরাপদ করে তুলবে। ভবিষ্যতের এই প্রস্তুতি হজযাত্রীদের জন্য যেমন আশার বার্তা, তেমনি পুরো হজ ব্যবস্থাপনাকেই আরও আধুনিক ও জনবান্ধব করে তুলবে।