খুলনা: সড়কের অর্ধেক জুড়ে ছটিয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। পথচারীদের ওই এলাকা পার হাত হচ্ছে নাক চেপে ধরে। খুলনা মহানগরীর কেডিএ এভিনিউয়ে রাশিদা মেমোরিয়াল ক্লিনিকের পাশে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। স্থানীয়রা জানায়, প্রায় সময় এখানে ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে।
একই দিন ওই সড়কের লায়ন চুক্ষু হাসপাতালের সামনে প্রিন্স ডায়াগনস্টিকের পাশে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। সড়কের অর্ধেক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। কাক, কুকুর খাবারের সন্ধান করায় ময়লা আরও ছড়িয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন চলছে এ অবস্থা।
শুধু এ দু‘টি স্থানই নয়, নগরীর ১৫৯টি স্থানে সড়কের ওপর এভাবে দিনের অনেক সময় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে। ফলে দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষ ও পথচারীদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কঞ্জারভেন্সি বিভাগ ঠিকমতো ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে না বলে নগরবাসীর অভিযোগ। ফলে খুলনা এখন নোংরা ও দুর্গন্ধময় নগরীতে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে বর্তমানে ৫৮২ জন স্থায়ী ও আউট সোর্সিংয়ে ২০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী সড়ক ঝাড়– দেয়া, ময়লা-আবর্জনা অপসারণ, ড্রেন পরিষ্কারসহ পরিচ্ছন্নতা কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে নিয়োগ হওয়া প্রায় ৪০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কেসিসি বিভিন্ন বিভাগের অফিসে ক্লারিক্যাল কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। তারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করেন না। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ভুগছে জনবল সংকটে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সময়ে মাস্টাররোলে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল। যার একটি বড় অংশ ছিল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে। তাদের অনেকেই এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পাস। ফলে তারা কখনও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিযুক্ত হয়নি। ওই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত তাদেরকে দিয়ে অফিশিয়াল বিভিন্ন কাজ করানো হচ্ছে।
এদিকে প্রতিদিন নগরীতে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন ময়লা-আবর্জনা উৎপন্ন হয়। কেসিসির কর্মকর্তাদের দাবি, ট্রাকসহ ৮৭টি যানবাহন ও ৩৫০টি ভ্যানের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ মেট্রিক টন তারা অপসারণ করেন। ২০০ মেট্রিক টন ময়লা লোকজন ড্রেনের মধ্যে এবং বাড়ি ও রাস্তার পাশে এমন জায়গায় ফেলে যে সেখান থেকে অপসারণ করা সম্ভব হয় না।
নগরীর নিউমার্কেটের পেছনে প্রান্তিক মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য সেখানে কেসিসির পক্ষ থেকে কনটেইনার দেয়া হয়েছে। সেই কনটেইনারে ময়লা ভরে যাওয়ার পর ময়লা ফেলা হয় রাস্তার ওপর। নিরালা মোড় ও মজিদ স্মরণিতে হোটেল মিলেনিয়ামের বিপরীতে ময়লা ফেলার স্থানের পাশে কেসিসির দেওয়াল তৈরি করে দিয়েছে। দেওয়ালের কারণে এখন আর রাস্তা থেকে ময়লা দেখা যায় না। কিন্তু ময়লার দুর্গন্ধ আছে আগের মতোই।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর মোট ৮২টি পয়েন্টে সড়কের ওপর ও ৭৭টি পয়েন্টে কনটেইনারের মধ্যে নগরবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে থাকে। কিন্তু কনটেইনারগুলো ভরে যাওয়ার পর ময়লা ফেলা হয় এর পাশে সড়কের ওপর। সেখান থেকে কেসিসির কর্মীরা ভ্যান ও ট্রাকে করে ময়লা অপসারণ করে ৭টি এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) এ নিয়ে যায়। এসটিএস থেকে ট্রাকে করে ময়লা নিয়ে রাজবন্ধ এলাকায় ডাম্পিং করা হয়।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, নগরবাসী চায় ক্লিন ও গ্রিন সিটি। কিন্তু নগরবাসীর সেই প্রত্যাশা কেসিসি কর্তৃপক্ষ পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নগরীর ময়লা-আবর্জনা ঠিকমতো অপসারণ করা হয় না। এর জন্য দায়ী কেসিসি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা।
কেসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, নগরীর কোনো পয়েন্ট থেকে দিনে ১ বার, কোনো পয়েন্ট থেকে ২ বার আবার যেসব পয়েন্টে বেশি ময়লা ফেলানো হয় সেখান থেকে ৩ বার ময়লা অপসারণ করা হয়। কিন্তু নগরবাসী যখন খুশী তখন ময়লা ফেলে থাকেন। ময়লা অপসারণের কিছু সময় পর দেখা যায় অনেকে ময়লা ফেলেছেন। তখন সেই ময়লা অপসারণ করতে সময় লাগে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রায় ৪০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী উচ্চ শিক্ষিত। তারা এই কাজ করতে চায় না। সে কারণে তাদেরকে দিয়ে দীর্ঘদিন আগে থেকেই অফিশিয়াল কাজ করানো হয়। মানবিক কারণে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশিথে রাজশাহীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০/৩৫ থেকে ৬০/৬৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। আর খুলনায় রয়েছে ১০/১২ জন করে। অথচ প্রয়োজন ২০/২৫ জন করে। তবে আমরা চেষ্টা করছি।