পবিত্র লাইলাতুল কদর

whatsapp sharing button

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হতে পারে আজ। পবিত্র রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে যে কোনো একটিতে লাইলাতুল কদর হতে পারে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। যদিও বাংলাদেশে ২৭ রমজানের রাতকেই কদরের রাত হিসেবে ধরা হয়। আজ সন্ধ্যা থেকে সারা দেশে দিসবটি পালিত হবে।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র কদর রজনি পালন করবেন। মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এমন একটি রাত নির্ধারণ করেছেন, যার নাম ‘লাইলাতুল কদর’। এ রাত এত সম্মানিত যে, এক হাজার মাস ইবাদত করলেও যে সওয়াব হতে পারে, তার চেয়ে লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সওয়াব অনেক বেশি। এ রাতকে পাওয়ার জন্য মন ও দেহের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করা হয়।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ‘কদর’ নামে আলাদা একটি সুরা নাজিল করেছেন। একবার নবিজি (সা.) সাহাবিদের সম্মুখে বনি ইসরাইলের জনৈক চারজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করে অধিককাল ধরে ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি। নবিজি (সা.)-এর পবিত্র জবান থেকে এ কথা শুনতে পেরে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করতে লাগলেন। সাহাবায়ে কেরামের এ আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান রাব্বুল আলামিন জিবরাইলের (আ.)-এর মাধ্যমে নবিজি (সা.)-এর কাছে এমন সময় এ সুরায়ে ‘কদর’ অবতীর্ণ করেন। (তাফসিরে মাজহারি)।

এ রাতের বিরাট মাহাত্ম্য ও অপরিসীম মর্যাদার কারণে রাতটিকে ‘লাইলাতুল কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি একে (কুরআনকে) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আপনি কী জানেন? লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটি নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’ (সুরা আল কাদর : ১-৫)। ‘নিশ্চয় আমি তা (কুরআন) এক মুবারক রজনিতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়’ (সুরা আদ দুখান : ১-৪)। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিজিক, বৃষ্টি ইত্যাদির মেয়াদ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে তা সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের লিখে দেওয়া হয়।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারা রাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, কাজা নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, জিকির-আশকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দরুদসহ নফল আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।

আয়েশা (রা.) বলেন, আমি একবার নবিজিকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি, তবে আমি কী করব? তখন রাসুল (সা.) আমাকে এ দোয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’ (তিরমিজি)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ রাতের বরকত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।