ইতিহাসের পাতায় ৬ আগস্ট

whatsapp sharing button

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২১৮তম (অধিবর্ষে ২১৯তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি
১৮২৫ : ল্যাটিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া স্বাধীনতা লাভ করে
১৯০৬ : বিপিনচন্দ্র পালের সম্পাদনায় বন্দে মাতরম্‌ (সংবাদপত্র) প্রথম প্রকাশিত হয়
১৯১৪ : কলকাতা থেকে ‘দৈনিক বসুমতী’ প্রথম প্রকাশিত হয়
১৯৪৫ : মিত্র শক্তি আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা শহরে পারোমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়
১৯৬২ : পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপ জ্যামাইকা স্বাধীনতা লাভ করে

জন্ম
১৮০৯ : লর্ড আলফ্রেড টেনিসন, ইংরেজ কবি
১৮৮১ : স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং, নোবেলজয়ী স্কটিশ জীবাণুতত্ত্ববিদ বিখ্যাত বিজ্ঞানী
১৮৮৪ : কার্তিকচন্দ্র দাশগুপ্ত, বাঙালি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
১৯২৯ : আবদুল গফুর হালী, বাংলাদেশি গীতিকার, সুরকার ও লোকশিল্পী

মৃত্যু
১৯৫৯ : ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ মোহাম্মদ হোসেন খসরু
২০০৪ : সাংবাদিক, সাহিত্যিক সন্তোষ গুপ্ত

দিবস
হিরোশিমা দিবস

সন্তোষ গুপ্ত
সন্তোষ গুপ্ত ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত একজন মানুষ। একাধারে কবি, লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক, সমালোচক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ছিলেন তিনি। ছিলেন শিল্প সমালোচকও। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। সন্তোষ গুপ্তের লেখা ‘অনিরুদ্ধের কলাম’ পাঠক মহলে সমাদৃত ছিল। দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে তিনি আমাদের দেশের সাংবাদিকতা জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ৯ জানুয়ারি ঝালকাঠির রুনসী গ্রামে। ছেলেবেলায় বাবার মৃত্যু। মা কিরণবালা তাকে অনেক কষ্টে মানুষ করেন। হিন্দু বিধবাদের আচার-আচরণ মানলেও তিনি ছিলেন প্রগতিশীল।

সন্তোষ গুপ্তের বইপড়ার আগ্রহ ছিল ছেলেবেলা থেকেই। একবার একনাগাড়ে রবীন্দ্রনাথের ৪৪টা কবিতা মুখস্থ বলে তিনি তার শিক্ষক মহেন্দ্রবাবুকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এবং তখন তিনি তাকে উপহার দিয়েছিলেন সঞ্চয়িতা ও চয়নিকা। রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি তিনি ম্যাক্সিম গোর্কি, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, স্বামী বিবেকানন্দ ও কাজী নজরুল ইসলামের রচিত বইয়ের সাথে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। ছয় বছর বয়সে রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি পড়তে শুরু করেন। সেই সময় ওই অজপাড়াগাঁয়ে মাত্র একটা ইংরেজি টু ইংরেজি অভিধান আর দুটো ঘড়ি থাকলেও এবং এলাকায় সংবাদপত্র আসলেও কারো তেমন পড়ার আগ্রহ ছিল না। এমন অবস্থায় সন্তোষ গুপ্তের লেখাপড়ার তীব্র স্পৃহা সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।

কর্মজীবন শুরু ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে আইজি প্রিজন অফিসে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় হিন্দুরা পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমান, আর মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে আসেন। কিন্তু তিনি ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসেন।

সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন ১৯৫৭ সালে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ছিলেন। পরে ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘দৈনিক সংবাদ’-এর সিনিয়র সহকারী সম্পাদক।

১৯৭১ সালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে তিনি বামধারার রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২ বছর কারাবরণ করতে হয়েছে।

কবিতা, শিল্পকলা, চিত্রকলা, রাজনীতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ১৮টি গ্রন্থ রয়েছে। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ। দীর্ঘ কর্মজীবনে রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও লেখালেখির মাধ্যমে জীবদ্দশাতেই তিনি আপসহীন এক কীর্তিমান পুরুষ হিসেবে সব মহলের কাছে পরিচিত ও সম্মানিত হয়েছিলেন।

সন্তোষ গুপ্ত সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদান রাখার জন্যে একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, মাওলানা তর্কবাগীশ পদক, জহুর হোসেন স্মৃতি পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ বহু পদক অর্জন করেছেন।

সন্তোষ গুপ্ত ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: সংগৃহীত