নাঈমের ঘুর্ণির পর শান্ত-সাদমানের ব্যাটে যাদু

whatsapp sharing button

দিনের প্রথমার্ধে আলো ছড়ালেন নাঈম হাসান। একাই শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন লিড। পরে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে গল টেস্টের চতুর্থ দিনটি নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

দিন শেষে ৫৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৭৭ রান। প্রথম ইনিংসের ১০ রানের লিড মিলিয়ে হাতে ৭ উইকেট নিয়ে ১৮৭ রানে এগিয়ে সফরকারীরা।

৪৯ রানের অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে আবারও শান্ত পাশে পেয়েছেন মুশফিকুর রহিমকে। অধিনায়ক ব্যাট করছেন ১১৩ বলে ৫৬ রানে, ৪৩ বলে ২২ রানে মুশফিক।

মধ্যাহ্ন বিরতির খানিক পর শ্রীলঙ্কা গুটিয়ে যায় ৪৮৫ রানে। যেখানে ১২১ রানে ৫ উইকেট নেন নাঈম; ৭৪ রানে ৩টি শিকার ধরেন হাসান মাহমুদ। নাহিদ রানা ১৯ ওভারে ৯৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। একটি করে নেন তাইজুল ইসলাম ও মুমিনুল হক।

ম্যাচের যা পরিস্থিতি তাতে এখনও ফল বের করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে দ্রুত রান তুলে পরাজয়ের সম্ভব্য পথ আটকে দ্রুত ইনিংস ঘোষণা করতে পারে; যেন স্বাগতিকদের গুটিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ঠ সময় পান বোলাররা।

পঞ্চম দিন এক সেশন ব্যাট করলেই বাংলাদেশের হারের পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করার জন্য যথেষ্ট সময় নাও পাওয়া যেতে পারে।

৪ উইকেটে ৩৬৮ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। একটা সময় যা মনে হচ্ছিল অভাবনীয়, সেটাই করে দেখান নাঈম। লাঞ্চে যাওয়ার সময় মাত্র ৩০ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। ক্রিজে ছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই থিতু ব্যাটসম্যান; হাতে ছিল ৪ উইকেট।

দ্বিতীয় সেশনে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০ রানে শেষ ৪ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। এতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নাঈম। ক্যারিয়ারে চতুর্থবার নেন ৫ উইকেট, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয়বার।

চতুর্থ দিনের তৃতীয় ওভারে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাাদেশ। ১৭ রান নিয়ে খেলতে নামা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ১৯ রানে থামান বাংলাদেশ স্পিনার নাঈম।

নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। পেসার হাসান মাহমুদের লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ৫ রান করা কুশল। বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন।

দিনের শুরুতে ৯ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটারকে হারানোয় ৩৮৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। সপ্তম উইকেটে লঙ্কানদের চাপমুক্ত করেন কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রত্নায়েকে। বাংলাদেশি বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে ৮৪ রানের জুটি গড়েন তারা।

দলীয় ৪৭০ রানে মিলানকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে দারুন এক ব্রেক-থ্রূ এনে দেন হাসান। এই ব্রেক-থ্রুর  পরের ১৫ রানে শ্রীলংকার শেষ ৩ উইকেট তুলে সফরকারীদের ৪৮৫ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ।

শেষ ৩ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন নাঈম। শ্রীলংকার কামিন্দু মেন্ডিস ৮৭ ও মিলান ৩৯ রান করেন। 

প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে এ নিয়ে আটবার লিড নিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কায় প্রথমবার। আগের সাত ম্যাচে জয় ৩টা, পরাজয় ৩টা, ড্র ১টা।

 এবারও ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি এনামুল হক। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা এই ওপেনারের এবারের অবদান ২০ বলে ৪। প্রথম ইনিংসের মতো (২৯) এবারও থিতু হয়ে আউট হন মুমিনুলও (৪০ বলে ১৪)।

তৃতীয় উইকেটে সাদমানের বিদায়ে ভাঙে ১৪৫ বল স্থায়ী ৬৮ রানের জুটি। ১২৬ বলে ৭ চারে ৭৬ রান করেন সাদমান।

প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান শান্ত এবার পঞ্চাশ করেছেন ১০৬ বলে। মুশফিকও দিচ্ছেন ভালো কিছুর আভাস। শেষ দিন সকালে তাদের দিকেই নজর থাকবে সবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৯৫

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৬৮/৪) ১৩১.২ ওভারে ৪৮৫ (কামিন্দু মেন্ডিস ৮৭, ধানাঞ্জায়া ১৯, কুসাল মেন্ডিস ৫, মিলান রাত্নায়াকে ৩৯, থারিন্ডু রাত্নায়াকে ০, জয়াসুরিয়া ১১*, আসিথা ৪; হাসান ২১-৪-৭৪-৩, নাহিদ ১৯-০-৯৭-০, তাইজুল ৪১-৩-১৫৬-১, নাঈম ৪৩.২-৪-১২১-৫, মুমিনুল ৭-০-২৮-১)।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৭৭/৩ (সাদমান ৭৬, এনামুল ৪, মুমিনুল ১৪, শান্ত ৫৬, মুশফিক ২২; আসিথা ৮-০-৩১-০, জয়াসুরিয়া ১৭-১-৪৮-১, থারিন্ডু রাত্নায়াকে ১৪-০-৫১-১, মিলান রাত্নায়াকে ৯-৪-১৩-১, ধানাঞ্জায়া ৮-০-২৭-০, কামিন্দু মেন্ডিস ১-০-২-০)।