বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন। এই সফরটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর, যা চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হতে পারে। মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফরের লক্ষ্য, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এ সফরটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন। এই সফরটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর, যা চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হতে পারে। মুহাম্মদ ইউনূসের এই সফরের লক্ষ্য, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এ সফরটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীন সফরের উদ্দেশ্য এবং গুরুত্ব নিয়ে অনেক বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকদের মতামত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক মজবুত ছিল এবং তাদের অনেক বড় অবকাঠামো প্রকল্পেও চীনের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেই সম্পর্কের গতিতে কিছুটা ছেদ পড়েছে। এই সফরকে “নতুন গতি আনা” হিসেবে দেখছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ। তাঁর মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের সফর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিভিন্ন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানও আরও শক্তিশালী হতে পারে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, এবং চীনের মধ্যে আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য বৈরিতা রয়েছে, আর এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে চীন বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে অবকাঠামো প্রকল্প এবং বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে।
মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে চীনের বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী এবং বাংলাদেশ চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ পাওয়ার প্রত্যাশা করছে। সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের সহযোগিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন যে, এই সফরে চীনের সঙ্গে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হবে এবং সুদের হার কমানোর জন্য আলোচনা হবে।
চীনের সাথে সম্পর্কের গভীরতা আরো বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকটি সম্ভাব্য উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটাবে, এবং চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও তীব্র করার জন্য তা অনেক কাজে আসতে পারে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, চীনের সাথে নতুন কিছু বড় প্রকল্প বা ঋণ চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে যা বাংলাদেশকে আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করতে পারে।
এই সফরের মাধ্যমে, বাংলাদেশ চীনের কাছে কিছু বিশেষ সুবিধা পাওয়ার আশাও করছে, যেমন শুল্ক সুবিধা বৃদ্ধি এবং ডেফারড্ পেমেন্ট সুবিধা। সিপিডির অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে এসব সুবিধা নিয়ে চুক্তি করতে পারে, তা দেশের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হবে। বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভুগছে, এবং চীনের সঙ্গে নতুন সমঝোতা এ সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।
এছাড়া, ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে কিছু নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ এবং সহযোগিতার পদক্ষেপের সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো বড় ঘোষণার পরিবর্তে প্রাথমিক উদ্যোগ এবং সমঝোতা স্মারকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এ সফরটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মোড় ঘুরাতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটি এমন এক সময় ঘটছে যখন বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তার অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে, বিশেষত ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি সাধনের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশের চীন সফর থেকে আসন্ন লাভগুলি দেশটির জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। তবে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসার এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক সহযোগিতার এই পদক্ষেপটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা