মিয়ানমারের আরাকান উপকূল থেকে সাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় দুটি ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন অন্তত ৪২৭ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। এমন মর্মান্তিক তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। গভীর সমুদ্রের অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি জমানোর চেষ্টায় প্রাণ হারানো রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সংকট কতটা গভীর এবং আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা কতটা জরুরি।
গত ৯ ও ১০ মে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকায় রওনা দিয়েছিলেন মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা যাত্রী। প্রথম নৌকাটিতে ছিলেন ২৬৭ জন, যা ৯ মে যাত্রা শুরু করে এবং অল্প কিছুদূর যাওয়ার পর ডুবে যায়। এ থেকে বেঁচে ফিরেছেন মাত্র ৬৬ জন। পরদিন ১০ মে দ্বিতীয় কাঠের নৌকাটিও একই পরিণতির শিকার হয়, যাতে ছিলেন ২৪৭ জন যাত্রী। এই নৌকাডুবি থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছেন মাত্র ২১ জন। বাকিরা সবাই এখনো নিখোঁজ। এই ভয়াবহ ঘটনার প্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআরের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান হাই কিউং জুন বলেন, “দশকের পর দশক ধরে চলা সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে রোহিঙ্গারা জীবন বাজি রেখে এমন বিপজ্জনক যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনা অভিযানের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, নাগরিকত্বহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই সমুদ্রপথে পাড়ি জমাতে চায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। তবে বাংলাদেশ আগেই জাতিসংঘকে জানিয়েছে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের আর আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন উচিত, রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি, মানবিক এবং টেকসই সমাধানে এগিয়ে আসা—যাতে আর কোনো শিশু, নারী কিংবা পরিবার সাগরের অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি