পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ফের ভারতের রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা প্রধান (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান পাকিস্তানের কাছে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারানোর কথা স্বীকার করার পর নতুন করে এনিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে দেশটির রাজনীতিবিদদের মাঝে।
কংগ্রেস পার্টি এই স্বীকার করে নেওয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার জাতিকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। সেইসাথে এটিকে জনসাধারণের আস্থা ও জাতীয় জবাবদিহিতার গুরুতর লঙ্ঘন হিসাবে বর্ণনা করে বিষয়টি সুরাহা করতে সংসদের জরুরি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেয়া এক পোস্টে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, সিঙ্গাপুরে একটি সাক্ষাৎকারে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের (সিডিএস) করা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন।
‘‘সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন অবিলম্বে ডাকা হলে কেবল তখনই এগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। মোদি সরকার জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। যুদ্ধের কুয়াশা এখন পরিষ্কার হচ্ছে,’’ বলেন তিনি।
শনিবার সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা সংলাপের ফাঁকে ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহানের করা মন্তব্যের জবাবে খাড়গে এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে, ভারতের এই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেন যে, পাকিস্তানের সাথে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় বাস্তবেই বেশ কয়েকটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে। ক্ষতির সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে চৌহান বলেন, ভুলগুলি দ্রুত চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সংশোধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- যুদ্ধবিমানগুলো ভূপাতিত করা নয়, বরং কেন সেগুলি ভূপাতিত করা হয়েছে। ভালো দিক হল আমরা যে কৌশলগত ভুল করেছি তা বুঝতে সক্ষম হয়েছি।
পাকিস্তান ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার যে দাবি করে আসছে, তা বরাবরই মোদি সরকার অস্বীকার করে আসছে। জেনারেল অনিল চৌহানের এই স্বীকৃতিকে ভারত সরকারের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই মাসের শুরুতে, ইসলামাবাদ দাবি করে, তারা ছয়টি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারতীয় কর্মকর্তারা এই দাবিকে যুদ্ধকালীন ভঙ্গি হিসাবে উড়িয়ে দেন।
চৌহান ব্লুমবার্গকে আরও বলেন, চার দিনের সংঘাত কখনও পারমাণবিক যুদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। আমি মনে করি পারমাণবিক সীমা অতিক্রম করার আগে অনেক জায়গা আছে, তার আগে অনেক সংকেত ছিল, আমার মনে হয় এরকম কিছুই ঘটেনি।
একদিন আগে, বিজেপির সিনিয়র নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও স্বীকার করেন, সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় বিমানবাহিনীর জেট বিমান ভূপাতিত করেছে।
“পাকিস্তান আমাদের পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করেছে। তারা আমাদের বিমান ভূপাতিত করতে চীনা বিমান ব্যবহার করেছে,’’ বলেন স্বামী।
তিনি আরও বলেন, “চীনা বিমানগুলি ভালো ছিল, কিন্তু ফরাসি বিমানগুলি (রাফাল) ভালো ছিল না। ভারতের চাহিদা মতে রাফাল ঠিকঠাক ছিল না।” স্বামী বিতর্কিত রাফাল চুক্তি সম্পর্কে একটি চমকপ্রদ দাবিও করেছেন। ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর মতে, “রাফালে দুর্নীতি হয়েছে, মোদি প্রধানমন্ত্রী থাকা পর্যন্ত এর তদন্ত হবে না।’’
ভারতীয় প্রতিরক্ষা প্রধানের স্বীকারের দুই দিন আগে, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেভান্থ রেড্ডিও প্রশ্ন তোলেন যে, সংঘর্ষের সময় ভারতের কতগুলি রাফায়েল জেট ভূপাতিত করা হয়েছে। হায়দ্রাবাদে একটি সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে রেড্ডি বলেছিলেন, “নরেন্দ্র মোদির আনা রাফায়েল বিমান পাকিস্তান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। কতগুলি রাফায়েল ভূপাতিত করা হয়েছে তা নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। নরেন্দ্র মোদির এনিয়ে উত্তর দেওয়া উচিত।”
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশও রাফাল ভূপাতনের কথা স্বীকার করার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। প্রতিরক্ষা প্রধান সংসদ বা জনসাধারণকে সরাসরি জানানোর পরিবর্তে বিদেশী মিডিয়ার মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করায় ভারত সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রাক্তন পাইলট এবং কংগ্রেস নেতা উত্তম কুমার রেড্ডিও স্বচ্ছতার জন্য সরকারের উপর চাপ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে, চার দিনের অভিযানে একটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি ভারত সরকারের অস্বীকার করা বন্ধ করা উচিত।
ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী টি এস সিং দেও একই ধরনের মন্তব্য করে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসও (টিএমসি) এই ঘটনায় জবাবদিহিতা দাবি করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার উপ-নেত্রী সাগরিকা ঘোষও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে না প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলা হয়েছে।
কেন আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রথমে এটি রিপোর্ট করবে? কেন এই তথ্যগুলি প্রথমে ভারতের নাগরিকদের, সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানানো হয়নি?’’ জিজ্ঞাসা করেন তিনি। সূত্র: জিও টিভি